নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ১ম পত্র | NCTB BOOK

সূত্র : কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার তার ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনও সে দিকে ঘটে।

 

ভরবেগ বা রৈখিক ভরবেগ 

(Momentum or Linear Momentum)

ধরা যাক, দুটি বস্তু ধাক্কা খেল। ধাক্কার পর বস্তুগুলো কোন দিকে যাবে—এটি কিসের দ্বারা নির্ধারিত হবে? কোনটি বড়, কোনটি ছোট অর্থাৎ তাদের ভর দ্বারা কোনটি বেশি দ্রুত চলছে, কোনটি কম দ্রুত চলছে অর্থাৎ তাদের বেগ দ্বারা ? কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ -ভর না বেগ? বস্তুগুলো কোন দিকে যাবে কীভাবে তা নির্ণয় করা হয়। এ সকল প্রশ্নের জবাবের জন্য ভরবেগের ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, একটি গতিশীল টেবিল টেনিস বলকে থামানোর চেয়ে একটি গতিশীল ট্রাককে থামানো অনেক কঠিন। কোনো গতিশীল বস্তুকে আমরা যদি থামাতে চাই তাহলে আমরা যে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হই তার একটি পরিমাপ হচ্ছে ভরবেগ। ভরবেগ হচ্ছে বস্তুর একটি ধর্ম যা বস্তুর ভর এবং বেগের সাথে সম্পর্কিত। বস্তুর ভর যত বেশি হবে এবং বস্তু যত দ্রুত চলবে তার ভরবেগও তত বেশি হবে।

সংজ্ঞা : বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকে ভরবেগ বলে। ব্যাখ্যা : কোনো বস্তুর ভর এবং বেগ হলে তার ভরবেগ

ব্যাখ্যা : কোনো বস্তুর ভর m এবং বেগ vহলে তার ভরবেগ

p=mv…   (4.1)

এই বেগ v বলতে আমরা আসলে বুঝি রৈখিক বেগ যা বস্তুর চলন গতির সাথে সংশ্লিষ্ট। এটি কৌণিক বেগ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই এই রৈখিক বেগ  v এর সাথে সংশ্লিষ্ট ভরবেগকে রৈখিক ভরবেগ বলা হয়, যা ঘূর্ণন গতির সাথে সংশ্লিষ্ট কৌণিক ভরবেগ থেকে আলাদা। সুতরাং অন্য কোনোভাবে উল্লেখ না থাকলে পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় আমরা ভরবেগp বলতেই বুঝি রৈখিক ভরবেগ ।

যেহেতু বেগ একটি ভেক্টর রাশি, কাজেই ভরবেগও একটি ভেক্টর রাশি। এর দিক বেগের দিকে। 

মাত্রা ও একক : ভরবেগের মাত্রা হলো ভর x বেগের মাত্রা অর্থাৎ MLT-1 এবং একক হলো ভরের একক x বেগের একক অর্থাৎ kg ms-1 

বেগের F=ma সম্পর্ক প্রতিপাদন

ধরা যাক, কোনো বস্তুর ভর m, বেগ  v এবং ভরবেগ p এর ওপর F বল প্রযুক্ত হলে এর ভরবেগের পরিবর্তন ঘটে । নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার dpdtতার ওপর প্রযুক্ত বলের ( F ) এর সমানুপাতিক অর্থাৎ,

dpdtF

বা, ddt(mv)F

বা, mdvdtF 

বা, ma=kF

এখানে K হচ্ছে একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এর মান রাশিগুলোর এককের ওপর নির্ভর করে। এসআই পদ্ধতিতে বলের একক নিউটনের সংজ্ঞা এমনভাবে দেওয়া হয় যাতে K এর মান l হয়। 

 যখন m= 1kg এবং a  1 ms-2  তখন 

F = 1N ধরলে উপরিউক্ত সমীকরণের K = 1 হয়। সুতরাং নিউটনের সংজ্ঞা হলো, “যে পরিমাণ বল 1 kg ভরের কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়া করে 1 ms-2 ত্বরণ সৃষ্টি করে তাকে 1 N বলে।”

অর্থাৎ 1 N = 1kg ms-2

অতএব,  F=ma ... (4.2)

বা, বল = ভর ত্বরণ 

 (4.2) সমীকরণের সাহায্যে আমরা বল পরিমাপ করতে পারি। ভর ও ত্বরণের গুণফল দ্বারা বল পরিমাপ করা হয়।

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র বলের সংজ্ঞা প্রদান করে-যা কোনো বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টি করে তাই হচ্ছে বল। কোনো একটি বস্তুর ওপর যদি কেবলমাত্র একটি বলই ক্রিয়া করে, তাহলে জ্বরণের অভিমুখ হবে বলের অভিমুখে এবং ত্বরণের মান হবে বলের মানের সমানুপাতিক।

কোনো বস্তুর ওপর যদি একাধিক বল প্রযুক্ত হন। তাহলে বস্তুর ওপর প্রযুক্ত স্বতন্ত্র বলগুলোর ভেক্টর সমষ্টিকে নিট (net) বল বলে। কোনো বস্তুর ওপর প্রযুক্ত স্বতন্ত্র বলগুলো যদি হয় যথাক্রমে  F1,F2,F3...ইত্যাদি, তাহলে নিট বল F হবে,

 F=F1,F2,F3... (4.2)

সুতরাং সে ক্ষেত্রে নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র তথা বল ও ত্বরণের সম্পর্কের (4-2 সমীকরণ) রূপ হয়,

 F=ma... (4.3)

সুতরাং নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রকে এভাবেও বিবৃত করা যায়, “কোনো বস্তুর ত্বরণ বস্তুর ওপর প্রযুক্ত নিট বলের সমানুপাতিক।”

(4.3) সমীকরণে বস্তুর ভর m হচ্ছে বস্তুর ত্বরণ ও প্রযুক্ত নিউরনের মধ্যকার সমানুপাতিক ধ্রুবক। একটি নির্দিষ্ট নিট বলের জন্য বেশি ভরের বস্তুর ত্বরণ কম হয়। সুতরাং বস্তুর ভর হচ্ছে বস্তুর সেই ধর্ম যা বস্তুর বেগের কোনো পরিবর্তনকে বাধা দান করে। যেহেতু জড়তার অর্থ হচ্ছে কোনো পরিবর্তনকে বাধা দেওয়া, কাজেই এই ভরকে অনেক সময় জড়তাত্তর বা জাডা (inertial mass) বলা হয়।

মাত্রা (4.2) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, বলের মাত্রা হবে MLT-2

Content added || updated By
Promotion